End this click

Sunday, May 7, 2017

লয়, মাত্রা ও তাল



লয়, মাত্রা ও তাল




লয়, মাত্রা ও তাল

সঙ্গীতের গতিকে লয় বলে। গতির তারতম্যের জন্য লয়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায় - ১) ধীরগতির সঙ্গীতের জন্য বিলম্বিত লয়, ২) দ্রুতগতির সঙ্গীতের জন্য দ্রুত লয় এবং ৩) মধ্যগতির সঙ্গীতের জন্য মধ্য লয়। মধ্য লয় বিলম্বিত লয়ের দ্বিগুণ ও দ্রুত লয়ের অর্ধেক গতির হয়ে থাকে। মাত্রা সঙ্গীতের লয় বা গতির দুরত্ব মাপার জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রত্যেকটি মাত্রার মধ্যবর্তী ব্যবধান সমান হয়। কয়েকটি ছন্দোবদ্ধ মাত্রার সমষ্টি দিয়ে তৈরী হয় একটি তাল।[১]

তালের নির্দ্দিষ্ট সময়কালকে অবিচ্ছেদ্দ্য সমান গতিতে অতিক্রান্ত করার নাম লয়। লয় প্রধানত তিন প্রকার-০১. বিলম্বিত লয় ০২. মধ্যে লয় ০৩. দ্রুত লয়। তবে বিশেষজ্ঞ গণ মনে করেন লয় আট প্রকার। এ ছাড়াও মাত্রার ভগ্নাংশ দ্বারা গঠিত বহুপ্রকার লয় হতে পারে যেমন: আড়,কুয়ড়,বিয়াড় ইত্যাদি। তালের মোট সময়টিকে পরিমাপ করার জন্য যে ক্ষুদ্রতম একক ব্যবহার করে লয়কে নির্দ্দিষ্ট করা হয়, এক কথায তাই মাত্রা। তাল হচ্ছে একটি নির্দ্দিষ্ট সময়কে নিদ্দিষ্ট ক্ষুদ্রভাগে ছন্দবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে তাল যন্ত্রে বাদনের মধ্য দিয়ে তার পুনরাবৃত্তি ঘটানো। প্রকৃতিতে আমরা যা কিছু অবলোকন করি তার সবকিছুই ছন্দবদ্ধ ভাবে একটা নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটে চলেছে অর্থাৎ সবই তালবদ্ধ। একারণে সব কিছুই আমাদের কাছে এত সুন্দর আর মনোরম বলে মনে হয়। আমরা রেলগাড়ীতে চড়লে এর প্রচন্ড শব্দের মাঝেও ঘুমিযে পড়ি কারণ এর চলার গতি ছন্দবদ্ধ ও এর গতি প্রায় সমান থাকে অথচ হঠাৎ ব্রেক কষলেই আমরা চমকে উঠি কারণ তখন চলার ছন্দ পতন ঘটে। তাই তাল হচ্ছে সঙ্গীতের প্রাণ যার বিচ্যুতি আমাদের পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সঙ্গীত জগতে হাজারো তালের জন্ম হয়েছে আবার হারিয়েও গিয়েছে অনেক। তাল যন্ত্রও আছে হাজারো রকমের। এর সবগুলোই যে আমাদের জানতেই হবে তা নয়। প্রাথমিক ভাবে আমরা কিছুতালের সাথে যদি পরিচিত হতে পারি তবে তা আমাদের জ্ঞানের দূয়ার ধীরে ধীরে খুলে দিবে।[২]
সাধারণ বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

তালের নির্দিষ্ট মাত্রা সমষ্টিকে কতকগুলি ছোট বা বড়, সমান বা অসমান বিভাগ এ বিভক্ত করা হয়। এই বিভাগ দুই বা ততোধিক মাত্রার হতে পারে। এর মধ্যে তালের প্রথম বিভাগের প্রথম মাত্রাকে সম্ বলা হয়। সঙ্গীতের সময়ে সম্ কে অন্য মাত্রা থেকে পৃথক করে বোঝানোর জন্য বিশেষ জোর বা ঝোঁক দেওয়া হয়। সম্ কে বোঝানোর জন্য + বা X চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। তালের একটি বিভাগের প্রথম মাত্রার নাম ফাঁক বা খালি। একে ০ চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয়। সঙ্গীতের সময় শব্দ না করে হাতের ইঙ্গিতে ফাঁক কে অন্য মাত্রা থেকে পৃথক করে বোঝানো হয়। তালের বিভাগগুলির মধ্যে যে গুলির প্রথম মাত্রায় হাতে তালি দিয়ে শব্দ করে দেখানো হয়, তাদের তালি বা ভরী বলে। ফাঁক ছাড়া আর সব বিভাগের প্রথম মাত্রায় তালি দেওয়া হয়। তালের প্রথম থেকে শেষ মাত্রা পর্যন্ত বাজানোর পর আবার প্রথম থেকে শুরু হলে তাকে আবর্তন বলে। [১]

যে সব তালের পদবিভাগ গুলি সমান মাত্রার দ্বারা গঠিত,তাকে সমপদী তাল বলে। যেমন: দাদরা তালটি ০৬ মাত্রা দ্বারা গঠিত,এর পদবিভাগটি হচ্ছে-- ধা ধি না । না তি না।। আর্থাৎ তিন তিন করে সামান মাত্রা নিয়ে এর পদবিভাজন করা হযেছে। কাহারবা,ত্রিতাল,চৌতাল ইত্যাদিও সমপদী তাল। যে সব তালের পদবিভাগ গুলি অসমান সেই সব তালকে বিসমপদী তাল বলা হয়। যেমন তেওড়া তালটি ০৭ মাত্রার এবং এর পদবিভাজনটি হচ্ছে-- ধা ধি না । ধি না । ধি না ।। অর্থাৎ তিন দুই দুই করে অসমান ভাবে পদ বিভাজন করা হয়েছে। ঝাপতাল, ধামার ইত্যদিও বিসমপদী তাল। সমান সংখ্যক মাত্রা বিশিষ্ট যে কোন বোল বা বাণী পর পর তিনবার বাজিয়ে গদের মুখে আসাকে তিহাই বলে। তেহাই দুই প্রকার। যথা: দমদার তেহাই ও বেদমদার তেহাই। যে তেহাই এর মধ্যবর্তী সময়ে দম নেয়ার অবকাশ থাকে তাকে দমদার তেহাই বলে। যে তেহাই এর মধ্যবর্তী সময়ে দম নেয়ার অবকাশ থাকেনা তাকে বেদমদার তেহাই কলে।

বিভিন্ন প্রকার তাল[সম্পাদনা]
ত্রিতাল[সম্পাদনা]

ত্রিতাল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি বহুল ব্যবহৃত তাল। ত্রিতাল ১৬ মাত্রা বিশিষ্ট সমপদী তাল। এর পদ-সংখ্যা = ৪, ছন্দ-বিভাগ = ৪/৪/৪/৪ । এর তিনটি তালি ও একটি ফাঁক, তাই এর নাম তিনতাল বা ত্রিতাল বা তেতাল বা তেতালা । ত্রিতালের বোল:
+ধা ধিন্ ধিন্ ধা । ৩ধা ধিন্ ধিন্ ধা । ০না তিন্ তিন্ তা । ১তেটে ধিন্ ধিন্ ধা ।। ধা
কাহার্‌বা তাল[সম্পাদনা]

কাহার্‌বা, কাহেরবা, কার্ফা, ইত্যাদি নামে পরিচিত। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে ৪-৪ ছন্দের জন্যে ত্রিতাল ব্যবহার বেশি হলেও লঘু সঙ্গীতের ক্ষেত্রে ৪-৪ ছন্দের জন্যে কাহারবাই সর্বাধিক ব্যবহৃত। কাহার্‌বা আট মাত্রার একটি সমপদী তাল। চতুর্মাত্রিক (৪-৪) ছন্দ। এর দুটি বিভাগ - একটি তালি ও একটি খালি। কাহারবার বোল:
+ধাˈ গেˈ নাˈ তিˈ । ০নাˈ কˈ ধিˈ নাˈ ।। [১]
+ধাˈ গেˈ তেˈ টেˈ । ০নাˈ কˈ ধিˈ নাˈ ।।
দাদ্‌রা তাল[সম্পাদনা]

এটি একটি ছয় মাত্রার সমপদী তাল। এর ছন্দ ত্রিমাত্রিক। এর দুটি বিভাগ - একটি তালি ও একটি খালি। তালি ১ মাত্রায় ও খালি ৪ মাত্রায়। দাদ্‌রার বোল নিম্নরূপ:
+ধাˈ ধিনˈ নাˈ । ০নাˈ থুনˈ নাˈ ।। [১]
+ধাˈ ধিˈ নাˈ । ০নাˈ তিˈ নাˈ ।।
খেমটা তাল[সম্পাদনা]

দাদ্‌রার ন্যয় 'খেমটা তালটিও ৬ মাত্রায় গঠিত। এতে আছে ১টি তালি বা আঘাত ; ১টি অনাঘাত বা ফাঁক। বোল নিম্নরূপ:
+ধাগে কৎ তা ০ধাগে ধিন ধাধা
তেওরা তাল[সম্পাদনা]

তেওরা তালের আরেক নাম তেওট। এটি সাত মাত্রার বিষমপদী তাল। প্রথম বিভাগটি তিন মাত্রার এবং পরের দুটি প্রতিটি দুই মাত্রার। এতে তিনটি তালি আছে এবং কোন ফাঁক নেই। বিভিন্ন বোলে এটি বাজানো যায়। তবে সচরাচর যে সকর বোলে তবলায় সঙ্গৎ করা হয় সেগুলোর কয়েকটি হলো:
+ধা দেন্ তা । ২তিট কতা । ৩গদি ঘিন ।। [১]
+ধা কৎ তা । ২ধিন ধা। ৩ ত্রেকে ধিন ।।
রূপক তাল[সম্পাদনা]

রূপক তেওরার অনুরূপ একটি তাল। এটিও সাত মাত্রার বিষম্পদী তাল। প্রথম বিভাগটি তিন মাত্রার এবং পরের দুটি প্রতিটি দুই মাত্রার। রূপক তালে ১টি ফাঁক, ২টি আঘাত ; তবে এতে প্রথমেই সম-এর ঘরে ফাঁক। বোল নিম্নরূপ:
০তী তী না । ১ধী না । ২ধী না ।।[১]
০তিন তিন তাক । ১ধিন ধাগে । ২ধিন ধাগে ।।
ঝাঁপতাল[সম্পাদনা]

ঝাঁপতাল এটি ১০ মাত্রায় গঠিত। এর অন্য নাম পাত্‌রা। এতে আছে ৩টি তালি বা আঘাত ; ১টি অনাঘাত বা ফাঁক। বোল নিম্নরূপ:
+ধিন ধা ৩ধিন ধিন ধা0কৎ তা ১ধিন ধিন ধা । ধা বা ধিন ।বা

ধিনা ধিধি না , তিনা ধিধি না
একতাল[সম্পাদনা]

একতাল ১২ মাত্রা বিশিষ্ট একটি সমপদী তাল। এই তালটি তিন প্রকার। যথা: ক)দ্বিমাত্রিক একতাল খ)ত্রিমাত্রিক একতাল গ)চতুর্মাত্রিক একতাল। এছাড়াও বিলম্বিত একতাল বাজানোর সময় এর প্রতিটি মাত্রা চার মাত্রার সমান করে টেনে বাজানো হয়,ফলে তা ৪৮ মাত্রার মত মনে হলেও মূলত: তা দ্বিমাত্রিক একতাল ১২ মাত্রার একটি বিলম্বিত রুপের ভিন্ন প্রকাশ মাত্র।
+ধিন ধিন।০ধাগে তেরেকেটে।২তু না।০কৎ তা।৩ধাগে তেরেকেটে।৪ ধি না।।
+ধিন ধিন না।২তেরেকেটে তু না।০কৎ তু না।৩তেরেকেটে ধি না।।
+ধিন ধিন ধা ধা।২ দেন তা তা ধিন।৩ধাগে তেরেকেটে তুনা কৎতা।।
বিভিন্ন অপ্রচলিত তাল[সম্পাদনা]

এছাড়াও কয়েকটি অপ্রচলিত তাল রয়েছে; এগুলো হলোঃ
তাল খামসা;
পটতাল;
মোহন তাল;
দোবাহার;
ধামার।

তাল খামসা ৮ মাত্রার তাল, যাতে ৫টি তালি এবং ৩টি ফাঁক আছে। পটতাল ৪ মাত্রার, এতে ১ টি তালি এবং ১টি ফাঁক। মোহন তাল ১২ মাত্রায় গঠিত, এতে তালি ৭টি, ফাঁক ৫টি। ১৩ মাত্রার দোবাহার তালে তালি ৯টি এবং ফাঁক ৪টি। ধামার ১৪ মাত্রায় গঠিত, এতে ৩টি তালি এবং ১টি ফাঁক থাকে।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

ঝাঁপ দাও:ক তবলার ব্যাকরণ- প্রথম আবৃত্তি - ডঃ প্রশান্ত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম প্রকাশ, চতুর্থ সংস্করণ, জানুয়ারী ১৯৯৬, প্রকাশক - প্রজন্ম, ১৯৭ আন্দুল রোড, হাওড়া
ঝাঁপ দাও↑ http://www.gunjanmusicschool.com/raga/raga-imana-prasange/tatbiya-adhyaya-theory/tala-o-chanda
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
তালসমূহের তালিকা - সম্পাদনা


অর্জুন তালঅর্ধ ঝাঁপতালআড় খেমটা তালআড়া চৌতালআড়া ঠেকা তালআদি তালআদ্ধা তালউপরাল তালএকতালকুণ্ডল তালকন্দর্প তালকুম্ভ তালকরালমঞ্চ তালকুলতালকাওয়ালী তালকাশ্মীরী খেমটা তালকাহারবা তালকৈদ ফোরদস্ত তালখয়েরা তালখামশা তালখেমটা তালগজঝম্প তালগণেশ তালচক্র তালচিত্রা তালচৌতালছপকা তালছোট লোফাজগপাল তালজয়মঙ্গল তালঝম্পা তালঝুমরা তালঝুলুম তালঝাতি তালঝাঁপতালটপ্পা তালঠুংরী তালত্রিতালত্রিপুট তালতিলওয়াড়া তালতেওরা তালদাদরা তালদীপচন্দী তালদোবাহার তালধুমালী তালধামার তালনন্দন তালনিঃসারক তালপঞ্চম সওয়ারী তালপটতালপাঞ্জাবী ঠেকা তালপোস্ত তালফোরদস্ত তালব্রহ্মতালব্রহ্মযোগ তালবসন্ত তালবিক্রম তালবিষ্ণুতালবীরপঞ্চ তালভরতঙ্গা তালমত্ততালমণি তালমহেশ তালমোহন তালযৎ তালযতিশেখর তালরুদ্র তালরূপক তালরাশ তাললক্ষ্মী তাললঘুশেখর তাললীলা বিলাস তালশক্তিতালশঙ্কর তালশঙ্খ তালশিখর তালসওয়ারী তালসুরফাঁকতালসরস্বতী তালসাত্তি তালসেতারখানি তালহপ্তা তাল

রাবীন্দ্রিক তাল: উল্টোষষ্ঠী তালএকাদশী তালঝম্পক তালনবতালনবপঞ্চ তালরূপকড়া তালষষ্ঠী তাল

No comments:

Post a Comment

Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.

বিশ্বের সেরা ১০ পর্ণ স্টার এবং তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী পর্ন তারকা তিনি

বিশ্বের সেরা ১০ পর্ণ স্টার এবং তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় বিশ্বের সেরা ১০ পর্ণ স্টার এবং তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ২০১৪ সালে পর্ণ জগতে আসা মিয়া খলিয়া...