নৃত্যনাট্
নৃত্যনাট্য গীতিনির্ভর নাট্যধর্মী নৃত্য। নানা কাহিনী অবলম্বনে এ নৃত্য নির্মিত হয়। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গীতবাদ্য সম্বলিত নৃত্যচর্চার উল্লেখ আছে, আধুনিক পরিভাষায় যাকে বলা যায় নৃত্যনাট্য। রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাগায়ক জয়দেবের গীতগোবিন্দম্ এমনই একটি গীত-বাদ্য-নৃত্য-বহুল রচনা। এতে নৃত্য-গীতসহ নাটকীয়তা আছে বলেই একে নৃত্যনাট্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পরবর্তীকালে নৃত্যনাট্যের এই ধারার বিলুপ্তি ঘটে। আধুনিক কালে নৃত্যনাট্য বলতে যা বোঝায় তার স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর সৃষ্ট নৃত্যনাট্য চন্ডালিকা, শ্যামা ইত্যাদি বঙ্গসংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ নৃত্যনাট্যের যে ধারা প্রবর্তন করেছেন, পরবর্তী দীর্ঘকাল যাবৎ সেই ধারাই অনুসৃত হয়েছে। বিশ শতকের মধ্যভাগে সেই ধারার বিবর্তন ঘটিয়ে এর আধুনিকীকরণ করেন উদয়শঙ্কর। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য মূলত গীতপ্রধান এবং উদয়শঙ্করের নৃত্যনাট্য আবহ সঙ্গীত প্রধান। ১৯৬১ সালে কলকাতায় রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকীতে উদয়শঙ্কর রবীন্দ্রনাথের সামান্য ক্ষতি ও অভিসার কবিতাকে সর্বপ্রথম নৃত্যনাট্যে রূপান্তরিত করে দর্শকনন্দিত হয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট অন্যান্য নৃত্যনাট্য কল্পনা (সিনেমা) ও লেবার এন্ড মেশিন আজও অবিস্মরণীয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পূর্ব পর্যন্ত বাংলা নৃত্যনাট্য রাবীন্দ্রিক ধারা এবং উদয়শঙ্করের আধুনিক টেকনিক দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এর সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ফলে নৃত্যনাট্যের বিষয় ও আঙ্গিকগত পরিবর্তনও হয়। বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটে নানান বিষয় অবলম্বন করে অসংখ্য নৃত্যনাট্য তৈরি ও মঞ্চস্থ হয়। বাংলাদেশে তৈরি নৃত্যনাট্যগুলিকে বিষয়গত দিক থেকে দুভাগে ভাগ করা যায়: সামাজিক এবং রাজনৈতিক ও গণনৃত্যনাট্য।
সামাজিক নৃত্যনাট্য ১৯৪৮ সালে রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ইন্দ্রসভা নামে একটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেন। এর বিষয়বস্ত্ত ছিল হিন্দু পৌরাণিক দেবতা ইন্দ্রের রাজসভার কাহিনী। সদ্য স্বাধীন মুসলিম প্রধান দেশে এটাই ছিল প্রথম নৃত্যনাট্য। পরে ১৯৫২ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের পটভূমিকায় যেন ভুলে না যাই নৃত্যনাট্যটি মঞ্চস্থ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মন জয় করেন। এরপর পারস্য কাহিনী অবলম্বনে হাফিজের স্বপ্ন ও ইরানের পান্থশালা শিরোনামে দুটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেন। ১৯৫৪ সালে এই মহান শিল্পীর মৃত্যুর পর ১৯৫৫ সালে তাঁরই নামানুসারে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বুলবুল ললিতকলা একাডেমী। এই একাডেমীর প্রযোজনায় পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের অমর কাব্য নক্সী কাঁথার মাঠ নৃত্যনাট্যে রূপান্তরিত হয় এবং জি.এ মান্নানের পরিচালনায় ১৯৫৮ সালে এটি মঞ্চস্থ হয়। এ নৃত্যনাট্যের নায়ক-নায়িকা রূপাই ও সাজুর বিয়োগান্ত প্রেমের কাহিনীতে নানা বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। পরে নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে নতুন নতুন নৃত্যনাট্য রচনা ও মঞ্চায়নের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নৃত্যশিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করার প্রয়াস পান এবং এ উপলক্ষে প্রথম মঞ্চস্থ হয় শ্যামা নৃত্যনাট্যটি। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী আতিকুল ইসলাম সঙ্গীত এবং মন্দিরা নন্দী নৃত্য পরিচালনা করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পীদের উদ্যোগে চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা, মায়ার খেলা, চন্ডালিকা, শাপমোচন, ভানুসিংহের পদাবলী, তাসের দেশ প্রভৃতি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হয়েছে। বুলবুল ললিতকলা একাডেমী ও ছায়ানট এসব নৃত্যনাট্য মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করে। ১৯৬৭ সালে ভারতেশ্বরী হোমসে আমানুল হকের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় তাসের দেশ নৃত্যনাট্যটি।
নৃত্যনাট্য আনারকলিতে বুলবুল ও আফরোজ
রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যের এই ধারার অনুকরণে নজরুল ইসলামের জীবনভিত্তিক নৃত্যনাট্য হাজার তারের বীণা রচনা করেন ড. এনামুল হক। এটি প্রযোজনা করে বুলবুল একাডেমী। বাবুরাম সিং ও কাজল মাহমুদ নৃত্য পরিচালনা করেন এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেন আলতাফ মাহমুদ। ষাটের দশকে রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্যের পাশাপাশি দেশিয় নানা কাহিনী এবং আবহমান বাংলার লোকগাঁথা নিয়ে বহু নৃত্যনাট্য রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে মহুয়া, সোনাইমাধব, মলুয়া, নদের চাঁদ, চন্দ্রাবতী প্রভৃতি নৃত্যনাট্য তৈরি করেন যথাক্রমে পীযূষকিরণ পাল, যোগেশ দাশ, জি.এ মান্নান এবং নিকুঞ্জবিহারী পাল। এছাড়াও ভারত থেকে আগত বুলবুল একাডেমীর শিক্ষক অজিত সান্যাল বাংলার মানুষের জীবন নিয়ে শ্যামল মাটির ধরাতলে এবং গওহর জামিল রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়ে সামান্য ক্ষতি ও লোককাহিনী ভিত্তিক কাঞ্চন মালা নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেন।
আলপনা মুমতাজ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের অমর প্রেমগাথা শশীপন্নু ও পারস্য কবি ওমর খৈয়ামের জীবনচরিত অবলম্বনে ওমর খৈয়াম শিরোনামে দুটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেন।
ঢাকার বাইরেও অনেক নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হয়েছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রখ্যাত গীতিকার মোঃ মোহসীন রেজার রাজশাহীর আঞ্চলিক কাহিনী অবলস্বনে রূপসী গাঁ ও পদ্মার ঢেউ নামক দুটি নৃত্যনাট্য। এ দুটি বজলুর রহমান বাদলের নৃত্য ও আবদুল আজিজ বাচ্চুর সঙ্গীত পরিচালনায় রাজশাহীতে মঞ্চস্থ হয় যথাক্রমে ১৯৬০ ও ১৯৬৪ সালে। ১৯৬২ ও ১৯৭৬ সালে রুনু বিশ্বাস চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লোককাহিনী অবলম্বনে আমিনা সুন্দরী, ভেলুয়া সুন্দরী ও মালেকা বানু শিরোনামে নৃত্যনাট্যগুলি চট্টগ্রামে মঞ্চস্থ করেন। সেসময় একই নৃত্যনাট্য বিভিন্ন শিল্পী নৃত্যের মূল আঙ্গিক বজায় রেখে স্বীয় অভিজ্ঞতায় উপস্থাপন করেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথের চন্ডালিকা, শ্যামা, শাপমোচন, চিত্রাঙ্গদা, মায়ার খেলা বাংলার লোকগাঁথা ভিত্তিক রূপবান, গুনাই বিবি, মহুয়া, বেদের মেয়ে, মলুয়া, সোনাইমাধব ইত্যাদি। এভাবে স্থানীয় লেখক ও কবিদের রচিত কিছু নৃত্যনাট্য, যেমন বাদল বরিষণে, কাবেরী তীরে, মুসাফির, জুলফিকার (নজরুলের জীবনভিত্তিক) ইত্যাদি মঞ্চস্থ হয়েছে। আলতামাস আহমেদের পরিচালনায় ঐতিহাসিক পটভূমিকায় রচিত মানসিংহ ও ঈশাখাঁর কাহিনী অবলম্বনে রচিত বীরাঙ্গনা সখিনা, একটি প্রেম-কাহিনী অবলম্বনে আমানুল হক রচিত সোনা ঝরা সন্ধ্যা এবং এ.কে.এম মুস্তবার রচনা ও পরিচালনায় শতাব্দীর স্বপ্ন (১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পটভূমিকায় রচিত), সুর পেলো সুরভি (দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ) ও ঝঞ্ঝা (প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রেক্ষাপটে রচিত) নৃত্যনাট্যগুলি ১৯৬৮-৬৯ সময়ের মধ্যে ঢাকার মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়।
রাজনৈতিক ও গণনৃত্যনাট্য ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পটভূমিকায় জি.এ মান্নান কাশ্মীর শিরোনামে একটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেন। পরে ১৯৬৬ সাল থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিমন্ডল পুনরায় উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এভাবে বারবার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে বাঙালি সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা অনেকটাই ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও নৃত্যশিল্পীরা তাদের সৃজনশীল প্রতিভাগুণে নতুন নতুন বাস্তবধর্মী নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন, যাতে বাংলার মানুষের জীবন প্রতিফলিত হয়েছে। এসব নৃত্যনাট্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন ইত্যাদির কথা রয়েছে। এ সময় সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, জোতদার, মজুতদার ও শোষণের বিরুদ্ধে অসংখ্য নৃত্যনাট্য রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ড. এনামুল হক রচিত এবং রাহিজা খানম ঝুনু ও বাবুরাম সিং পরিচালিত রাজপথ জনপথ, উত্তরণের দেশে; হাবিবুল চৌধুরী পরিচালিত প্রতিরোধে বহ্নিমান এবং আমানুল হকের রচনা ও পরিচালনায় জ্বলছে আগুন ক্ষেতে খামারে, হরতাল, ওরা কাজ করে ও দিগন্তে নতুন সূর্য। এগুলি সবই বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্বকালে রচিত ও মঞ্চায়িত হয়।
ব্যাটেল অব বাংলাদেশ- এর একটি
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নৃত্যশিল্পীরা নতুন উদ্দীপনায় নৃত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং তাঁদের সৃজনশীল প্রতিভাগুণে নতুন নতুন নৃত্যনাট্য রচিত হয়। সঙ্গত কারণেই সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গটি প্রাধান্য পায়। নৃত্যনাট্যের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তখন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম নৃত্যনাট্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তির সম্মানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমানুল হকের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়। এর কিছুদিন পর একই পটভূমিকায় নবারুণ শিরোনামে আরেকটি নৃত্যনাট্য যৌথভাবে পরিচালনা করেন জি.এ মান্নান, গওহর জামিল ও আলতামাস আহমেদ।
এ সময় মুস্তফা সরোয়ার রচিত ছয়দফা আন্দোলন ভিত্তিক বিক্ষুব্ধ ৭ই জুন নৃত্যনাট্যটি আমানুল হকের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের একমাত্র সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বরলিপি সংস্কৃতি সংসদ কর্তৃক আয়োজিত ও মাহ্ফুজুর রহমান পরিচালিত গ্রামীণ জীবন-কাহিনী অবলম্বনে ধানসিঁড়ি নদী তীরে নৃত্যনাট্যটি মঞ্চস্থ হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। ১৯৮০ সালের পরে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নৃত্যনাট্য হলো আমানুল হক রচিত ও পরিচালিত ব্যাটেল অব বাংলাদেশ, আমার স্বদেশ আমার ভালবাসা, লায়লা হাসান পরিচালিত বিজয় পতাকা, আকরাম আলী রচিত ও কমল সরকার পরিচালিত স্বাধীনতার স্বপক্ষে, রওশন জামিল পরিচালিত মায়ের মুক্তি, ড. এনামুল হক রচিত ও রাহিজা খানম ঝুনু পরিচালিত সূর্যমুখী নদী ইত্যাদি। এছাড়াও নতুন নতুন আঙ্গিকে বিচিত্র বিষয় অবলম্বনে একাধিক নৃত্যনাট্য রচিত হয়েছে। যশোরের কিংশুক সঙ্গীত একাডেমীর উদ্যোগে শকুন্তলা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর প্রযোজনায় শহীদুল ইসলাম রচিত এবং শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ পরিচালিত চির অম্লান ও মায়ের চোখে পূর্ণিমা নৃত্যনাট্য দুটি মঞ্চস্থ হয় ১৯৯৫ সালে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত রূপবান, ঝংকার ললিতকলা একাডেমীর গুনাইবিবি, জাগো আর্ট সেন্টার আয়োজিত কাঞ্চনমালা ও রাধার মানভঞ্জন, বাংলাদেশ ব্যালে ট্রুপ প্রযোজিত যৌতুক বিরোধী পটভূমিকায় কুসুমের স্বপ্ন প্রভৃতি নৃত্যনাট্য পরিচালনা করেন যথাক্রমে শামীম আরা নীপা, দীপা খন্দকার, আবুল কাশেম, রওশন জামিল, বেলায়েত হোসেন এবং আমানুল হক। এ ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আগত মি. কিম-এর কোরিওগ্রাফিতে পাশ্চাত্য ব্যালের অনুকরণে রচিত মেঘের আড়ালে সূর্য নৃত্যনাট্যটি মঞ্চস্থ হয়।
মঞ্চনৃত্যনাট্য ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনেও একাধিক নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে নজরুলের কাজরী, রবীন্দ্রনাথের কাব্য অবলম্বনে শাহজাহানের স্বপ্ন, জসীমউদ্দীনের মধুমালতী, জাগরণমূলক সূর্য তোরণ, অরুণাচলের পথে, সার্কভুক্ত সাতটি দেশের প্রতীকে সাতটি তারার দেশ, আরব্য উপন্যাসের কাহিনী অবলম্বনে আলীবাবা ও চল্লিশ চোর, গ্রাম্য পটভূমিতে বাঁশরীয়া ও কিষাণীর স্বপ্ন, খরার ওপর ভিত্তি করে মেঘ রাজা মেঘ দে, জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা অবলম্বনে আমার প্রিয়াকে নিয়েছে কেড়ে, গ্রাম্য প্রেমের কাহিনী অবলম্বনে মন বেসাতির হাটে, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় ওরা এ মাটির সন্তান ইত্যাদি। এগুলি পরিচালনা করেছেন যথাক্রমে জিনাত বরকতউল্লাহ, মোস্তফা মনোয়ার, জি.এ মান্নান, রাহিজা খানম ঝুনু, বরকতউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা খান এবং আমানুল হক।
একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, দেশে যখনই কোনো সংকট এসেছে কি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক, শিল্পীরা তাৎক্ষণিকভাবে সেসব বিষয়ের ওপর নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন; নানা রকম উপকরণ ও টেকনিকের সাহায্যে সৃষ্টি করেছেন মানসম্পন্ন নৃত্যনাট্য, যা কেবল বৈভবে নয় বৈচিত্র্যেও সম্পদশালী। এসব নৃত্যনাট্য সঙ্গীত, তাল, রস সব দিক থেকে দর্শকদের কাছে উপভোগ্য হয়েছে। [আমানুল হক
]
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.